মস্ত বড় তাল পুকুরের পাড় ঘেঁষে হেলে পড়া দোচালা ঘরটি অনেক করুণ ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজো দাঁড়িয়ে আছে। গেল বৈশাখে ঝড়ের আঘাত সহ্য করতে পারেনি ঘরটি। তবে ঘরের অধিবাসীদের জন্য ঈশ্বরের অতিরিক্ত করুণার ফলস্বরূপ ঘরটি শেষ পর্যন্ত আর ভূমিতে লুণ্ঠিত হয়নি।
কতইবা টিকে থাকবে আর! দাদার আমলের করা ঘর। টিনের ঘর বটে, কিন্তু যুগের সাথে একদম বেমানান। তাই কালের খেয়ার নির্মম কান্ডারী যেন নিজ হাতে সেই ঘরের পচা টিনের ছাউনিতে অসংখ্য ছোট বড় ছিদ্র করে রোদেলা দিনের আলোকরেখা আর বাদলা দিনের আশ্রয়হীন মেঘকণাকে তাদের ঘরের চিরস্থায়ী বাসিন্দা বানিয়ে দিয়েছে। সেই ঘরে আরো যে তিনটি বাসিন্দার বসবাস তাদের মধ্যে শহিদ উল্যাকে গ্রামের নিচু শ্রেণীর দরিদ্র মানুষগুলো সম্মান করে হাফিজ নামেই ডাকে। কারণ ছোটবেলায় সে নাকি সাতাশ পারা পর্যন্ত কোরআন শরীফ মুখস্ত করেছিলো। বাকি তিন পারা মুখস্ত করার ইতিহাস তার কখনো শুনা যায়নি। তবে গ্রামের উঁচু শ্রেণীর আর নতুন পয়সা গজানো নিচু মনের মানুষগুলো তাকে চিনে হাফিজ্যা নামে। সে তো কেবল একজন সাধারণ চাষা। অন্যের জমিতে বর্গা চাষ করে, অন্যের ক্ষেতে গায়ের ঘাম ঝড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করে, নিজের পেটে পাথর বেঁধে ধনবানদের রসনার জোগান দেয়। তার সাথে সামান্যতম ভদ্র ভাষায় কথা বলে নিজেদের মাথা হেট করার মত অত দুঃসাহস কি আছে তাদের?
সংসারে শত দুঃখ-দুর্দশার মাঝেও যে মানুষটি হাফিজ মিয়াঁর বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন তার নাম কুসুম। মা-হারা একমাত্র মেয়েটি দেখতে বংশের সাথে একদমই যায়না। গায়ে গোটে বাবাকে ছাড়িয়ে গেছে পনের বছর বয়সেই। সে কি চেহারা তার! গ্রামের মহিলাদের মুখে মুখে তার রূপের প্রশংসা। কেউ কেউ বলে তার মুখমন্ডল নাকি দেখতে ঠিক পানদানি’র মত সুন্দর। আবার কেউ বলে,
পানদানি না ছাই! ওর কাছে আসমানের চাঁন্দও হার মানবো। গোবরে পদ্মফুল ফুটেছে লো, গোবরে পদ্মফুল। এই মেয়ে যে ঘরে যাইবো দেখবা সেই ঘর আলোয় ভাইস্যা যাইবো।
এই চাঁদ মুখওয়ালা মেয়েটির বিয়ের ফুল ফুটেছে অনেক আগেই। কিন্তু এখনো অন্যের ঘরে আশ্রয় জোটেনি ওর কপালে, অন্যের ঘরের অন্ন রোচেনি তার মুখে। একেতো মাতৃহারা। তার উপর বাবার ভিটেমাটি ছাড়া আর বিশেষ কোন সম্পত্তি নেই ছেলের বাপকে খুশী করার জন্য।
তাই মেয়ে তার যত সুন্দরীই হোক বিয়ের বাজারে বিনা যৌতুকে মেয়েকে এতদিনেও পাড় করতে পারেনি হাফিজ। তবে এবার খোদা তায়ালা মুখ ফিরে তাকিয়েছেন তার দিকে। ছেলে দেখতে শুনতে খুব বেশি মন্দ নয়, তার উপর ছেলের গঞ্জে দোকান আছে। তাই আসা যাওয়ার জন্য একটি নতুন বাইসাইকেল দিলেই ছেলেটি বিয়ে করতে রাজি। হাফিজ খুশী হয়েই ছেলের এই প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। আসছে অগ্রহায়ন মাসের শেষের দিকে নতুন ফসল তোলার পরই ধূম করে মেয়ের বিয়ে দিবে সে।
কুসুমদের বাড়ির দক্ষিণ দিকেই বিস্তীর্ণ ধান ক্ষেত। ধান গাছে নতুন শীষ এসেছে কিছুদিন হল। এতদিন দখিণা বাতাসরা ভুল করে তাদের ঘরে গেলেও রোমাঞ্চিত হতোনা কুসুম। কিন্তু এখন সে অবসর সময়ে মাথার চুলগুলো কাঁধের উপর এলিয়ে দিয়ে বসে থাকে সবুজ ধান ক্ষেতের পাশে, যেখানে দখিণা বাতাসেরা নিত্য খেলা করে। সেখানে গুন গুন করে গান গায় আর মনে মনে স্বপ্নের বীজ বুনতে থাকে কুসুম। তার যে ধরা পড়ার সময় হয়ে এসেছে। তার অপেক্ষা শেষ হতে চায়না। এ অপেক্ষা যে কতটা দীর্ঘ আর কতটা ভালোলাগার তা কেবল কুসুমরাই বুঝে।
কুসুমের ছোট ভাই শাওনের বয়স তের কিন্তু বয়সের তুলনায় অনেক বেশি পরিণত সে। তার ব্যস্ততার অন্ত নেই। বোনের বিয়ে। তার যে অনেক কাজ করার বাকি। স্কুলে যাওয়া বলতে গেলে ছেড়েই দিয়েছে সে এখন। প্রতিদিন মানুষের সুপারি গাছে উঠে সুপারি পেড়ে দেয় তাদের। প্রতি গাছে উঠার জন্য এক গণ্ডা করে সুপারি নেয় সে। বাজারে দাম আসে সুপারির। প্রতি গণ্ডা সুপারি এক টাকা করে। এভাবে প্রতিদিন তিরিশ থেকে চল্লিশ টাকা আয় করে শাওন। বাবার সাথে একটা অলিখিত চুক্তি করেছে সে। বোনের বিয়ের জন্য দুইটা শাড়ি আর যাবতীয় সাজানোর প্রসাধনী টাকা সে জোগাড় করবে। আর বাবা জোগাড় করবে সাইকেল কিনার টাকা আর বিয়ের খরচপাতি। এইবার হাফিজের ফসল অনেক ভাল হবে। এক হাত লম্বা ধানের শীষ দেখেই চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক উঠে হাফিজের মনে।
দেখে নিস মা, বলে দিচ্ছি এইবার কিন্তু কম করে হলেও তিরিশ মণ ধানের কম হবেনা । পনেরো মণ ধান ঐ বেটা কসাইয়ের গোলায় গেলেও বাকি ধান বিক্রি করে সব দেনা শোধ দিয়েও তোর বরের জন্য একটা সাইকেল দেখবি ঠিকই কিনে আনবো।
কিন্তু এখানে কুসুমের আপত্তি। তাহলে বাবা তোমরা কি খেয়ে থাকবে? তোমরা কি আমার জন্য উপোস করবে?
আমাদের জন্য চিন্তা করিস নে মা। তুই চলে গেলে আমাদের বাপ বেটায় মিলে সংসার। ঢের চলে যাবে আমাদের। ভাবছি তোকে বিয়ে দেয়ার পর আর গ্রামে থাকবোনারে মা। শহরে চলে যাবো। সেখানে কাজের অভাব হবেনা। কিরে বাপ এই বুড়ো বাপের সাথে শহরে সংসার পাততে পারবিনে?
পারবোনা আবার! প্রসন্ন হাঁসিমাখা মলিন মুখ তুলে উত্তর দেয় শাওন।
তুমি কি আমাকে ছেড়ে শহরে গিয়ে থাকতে পারবে বাবা? আমার কি তোমারে দেখতে ইচ্ছে করবেনা বল?
হাফিজ চোখের পানি মুছতে থাকে।
তোকে ছেড়ে থাকতে আমারো কি কম কষ্ট হবে রে মা! কিন্তু কি করবো মা? আর যে পারিনা। যত দুঃখ সব বুঝি কেবল খোদা আমাগোরে দিছে। ঐ বেটা কসাই তো কয়েক খন্ড জমি দিয়াই লাপাত্তা। জমিতে ফসল ফলাইতে যে কি কষ্ট তা যদি ওগোরে বুঝাইতে পারতাম! হাল দেয়া, সার, কীটনাশক, চারা সবকিছুর দামই অনেক বাড়তি। পানিটা পর্যন্ত কিন্যা দিতে হয়। মহাজনের কাছে কিছু খর্চার টাকা চাইতে গেলে মৃত মায়ের নাম তুইল্যা গালি দেয়া শুরু করে, চৌদ্দ পুরুষের গায়ে কলঙ্ক কাঁদা ছিটাইয়া দেয়। তবুও পইড়া থাকি, পা ধইরা পইড়া থাকি। কিন্তু ওদের মন গলেনা। ওরা যে মানুষ না মা! একেকটা নরমাংসভোজী জানোয়ার, রক্তচোষা কীট।
রাতে মাটির বিছানায় আসন পেতে সেদ্ধ আলুর ভর্তা আর ভাত পেটে চালান দিতে দিতে নিভে আসা জ্বলন্ত কুপিটার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলতে থাকে হাফিজ। তার শরীরের সমস্ত রক্তে আজ যেন আগুন ধরে গেছে। তাই দুর্বল আর সরু কন্ঠনালী থেকে উচ্চারিত কথাগুলো রাতের অন্ধকার ভেদ করে চলে যাচ্ছে অনেকদূর। দূর থেকে দূর। দূরের গাছপালা, ধানক্ষেত আর কৃষকের ঘরের ছোট্ট জানালা থেকে প্রতিধ্বনিত হয়ে কথাগুলো আরো বহুগুন জোড়ে শব্দ করে ফিরে আসে আবার। যেন শত সহস্র হাফিজরা আজ মুখ খুলেছে। সবাই একত্রে বলতে চাইছে,
ওরা মানুষ না ! ওরা নরমাংসভোজী জানোয়ার, রক্তচোষা কীট।
এই কয়েকমাস খুব ভোরেই ঘুম থেকে উঠতে হয়ে হাফিজকে। ফজরের নামাজ শেষেই সে নেমে পড়ে কাজের সন্ধানে। বিনা মৌসুমে গ্রামে কাজ পাওয়া ভীষণ দায়। হাফিজকে মাঝে মাঝে তাই অনেক দূরের গ্রামেও যেতে হয়। কেননা ধান বিক্রি করা টাকায় যে কেবল একটা সাইকেলই কিনা যাবে মাত্র। কিন্তু একমাত্র মেয়ের বিয়েতে হাত তো আর গুটিয়ে রাখা চলবেনা। সে তার সাধ্য অনুযায়ী ধূম-ধাম করে মেয়ের বিয়ে দিবে। কত খরচের ব্যাপার। গ্রামের আট-দশজন মানুষকে না খাওয়াতে পারলে লোকে যে নিন্দা করবে, মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজন ব্যপারটিকে ভালভাবে নিবেনা। শেষে সব দোষের পাল্লা গিয়ে পড়বে মেয়ের ঘাড়ে। মেয়ের জন্য যদি এইটুকু না করতে পারে তবে যে সে মরেও শান্তি পাবেনা। তাই ব্যস্ততার অন্ত নেই হাফিজের। তবে এখানেও নানা বাঁধা তার। নিজের ফসলে ঠিকমত শ্রম না দিলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবেনা। তাই সপ্তাহে অত্যন্ত দুটো দিন সে কাজে যেতে পারেনা। আবার কিছু কিছু দিন খবর আসে মহাজনের কাজ করে দিতে হবে। কিন্তু কাজের বিনিময়ে মহাজনের টাকা পাওয়াটাও অনেক ভাগ্যের ব্যাপার। অবশেষে সপ্তাহান্তে সব খরচ মিটিয়ে যে পরিমাণ টাকা জমা হয় কুসুমের বিয়ের জন্য তা যে খুবই সামান্য। হাফিজকে আরো অনেক পরিশ্রম করা চাই।
ভোর বেলার উদিত লাল সূর্যটা এখন যেন আরো পূর্ব দিকে সরে গেছে, আকাশের অনেকটা নিচের দিকে নেমে এসে আলো বিলায় এখন সে। মুখচোরা বৈরাগি দখিণা বাতাসগুলো বিরহীর সুর ধরতে শুরু করেছে কয়েকদিন হয়ে গেল। হিমালয় ছুঁয়ে এখানকার ঘরে এসে এখন ভিড় করে তারা। হেমন্তের বড় রূপালী চাঁদটা কুয়াশায় ঢাকা পড়ে সন্ধ্যা নামার একটু পরেই। যাযাবর উত্তরী হিম হাওয়াগুলোর যে দাঁত গজাতে শুরু করেছে তা বুঝা যায় শেষ রাতের দিকে যখন মোরগরাও জেগে উঠেনি, শুকতারা রা অপেক্ষায় থাকে ভোরের। দিন শেষে ক্লান্ত-শ্রান্ত মানুষগুলো তখন একটু উষ্ণতা চায়, একটু শান্তি চায়, স্বপ্নের পথে পাড়ি দিয়ে কোন সুখের দেশে যেতে চায়। অথচ ঠিক তখনই ঘুম ভেঙ্গে যায় হাফিজ মিয়াঁর। তার তো এখন ঘুমানো চলেনা। কত কাজ করার বাঁকি। কুসুমের বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে। মাঠের সবগুলো ধান পেকে গেছে ইতিমধ্যে। সেগুলো কেটে বাড়িতে আনতে হবে। সোনালী ধানে ভরে যাবে তার ঘরের উঠোন। ভাগ ভাটোয়ারার পর সেগুলো শুকিয়ে বাজারে বিক্রি করতে হবে। কুসুমের বিয়ের আয়োজন করতে হবে তারপরেই। তার একামাত্র মেয়ের বিয়ে হবে। কত লোক আসবে। এত আনন্দ কোথায় রাখে সে!
পরেরদিন সকালবেলা খুব ব্যস্ত দেখালো হাফিজ মিয়াঁকে। সেই সাথে শাওনকেও। পুরাতন একটি গামছা জড়িয়েছে সে মাথায়, পড়নের লুঙ্গিটাকে কাছা বেঁধে এতটা উপরে উঠানো হয়েছে যে সম্ভ্রম বলতে যা কিছু আছে তার কিছুটা সবার সামনে সগর্ভে প্রদর্শিত হচ্ছে। তার নরম হাতে একটি কাস্তেও শোভা পাচ্ছে। হাফিজ মিয়াঁর পরবর্তী প্রজন্মের কৃষক সমাজের প্রতিনিধি সে।
হাফিজ মিয়াঁদের সাথে আজ গ্রামের অন্য একজন কৃষক আবুলও এসে যোগ দিয়েছে। অনেক কাজ আজ। আজকের মধ্যেই ক্ষেতের সমস্ত ধান কেটে আঁটুলি বেঁধে সেগুলো আবার বাড়িতে আনতে হবে। আকাশের যে অবস্থা। কখন না আবার বৃষ্টি নেমে আসে হঠাৎ করে। এখনকার আবহাওয়ার সাথে তাল মিলাতে পারেনা হাফিজরা। এখন আর ঋতু মেপে বৃষ্টি নামেনা। তাদের এ অভাবের সংসারে প্রকৃতির এমন বৈরি ভাব মেনে নিতে অনেক কষ্ট হয় তাদের। কি অপরাধ করেছে তারা প্রকৃতির কাছে?
কুসুমের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হাফিজরা যখন মাঠের দিকে পা বাড়াতে চলেছে তখন যেন কারো হাঁক শোনা গেল।
ঐ হাফিজ মিয়া কই যাও? দাঁড়াও।
কাস্তে হাতে মাঠ গমনেচ্ছুক তিনটি প্রাণী ফিরে তাকায় পেছন দিকে। হাফিজের চোখে মুখে অজানা অভূতপূর্ব এবং সম্ভাব্য বিপদের আশংকা বিরাজ করছে । কেননা যে লোকটি তাদের দাঁড় করিয়েছে সে তো যেন তেন কেউ নয়। মহাজনের আপন শ্যালক। নাম তার কাসেম। তার অসংখ্য খারাপ স্বভাবের মধ্যে যে দিকটি গ্রামের মানুষদের কাছে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ও নিন্দনীয় তা হল তার চরিত্র। তার পূর্ববর্তী পাপসমূহের সাক্ষী স্বরূপ অসংখ্য ক্ষতচিহ্ন কালো গর্তের আকারে শোভা পাচ্ছে তার সমস্ত মুখাবয়বে। মহাজন যখন তার ক্ষেত-খামার দেখাশোনা করার জন্য তাকে এই গ্রামে নিয়ে এসেছিল তখন তাকে দেখলে মনে হত একটা রোগা লিকলিকে সরু পাঠকাঠি যেন বাতাসে দুলছে। অথচ মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে গ্রামের দরিদ্র কৃষকগুলোকে চুষতে চুষতে গায়ে অনেক মাংস জমেছে ওর। তাই এমন সকালে তার আগমন যে ভোরবেলা কাক ডাকার চেয়েও অনেক বেশি অশুভ ইঙ্গিত বহন করে তা ঐ নিরীহ মানুষগুলোর ভীত সন্ত্রস্ত চোখের দিকে তাকিয়েই বুঝা যায়।
কাসেম সিগারেটের টানতে টানতে পশুর মত চোখের পলক না পেলেই ঘুরে ঘুরে কুসুমের আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করছে। কোরবানির হাঁটে পশুদের যেভাবে দেখা হয়। ধূলাময় মলিন কাপড়ে সর্বাঙ্গে ঢাকা কুসুম নিজেকে গুটিয়ে নেয় আরো। কুসুমকে দেখতে দেখতে তার মুখের জমানো সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে দেয় কুসুমের মুখে। হঠাৎ ঘটে যাওয়া এমন কাণ্ডে লজ্জায় আর অপমানে কাপড়ের আচলে অশ্রু-সিক্ত মুখ ঢেকে এক দৌড়ে কুসুম চলে যায় ঘরের দেউড়ির ভিতর। কাশেম তখন হো হো শব্দে লম্পটের মত হেঁসে বাতাস কাপাচ্ছে। নিজ চোখের সামনে ঘটে যাওয়া এমন ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়েও পারলোনা হাফিজ। ভয়ে আর উৎকণ্ঠায় তার কন্ঠ ক্ষীণ হয়ে এলো। শুধু বলল,
ধান তো এখনো কাটা হয়নাই। কাটা হইলে খবর দিমু। তখন আইসেন।
আমি কি তোমার ধান কাটা দেখতে আসছি নাকি? আমি আসছি অন্য কাজে।
কি কাজ?
তোমাগো আইজ ধান কাটা চলবোনা। ভাইজানের কাজ আছে। ওনার মেয়ে আর মেয়ের জামাই আসবো শহর থেইকা। বিরাট মানুষ ওনারা। বিরাট গাড়ি লইয়া আইবো। তাই তোমাগো আজ গ্রামের উত্তর পাড়ায় রাস্তার মধ্যে মাটি ফালাইয়া রাস্তা ঠিক করতে হইবো।
এমন কথা শুনে হঠাৎ করে কেঁদে উঠলো হাফিজ।
আমারে মাফ করেন সাহেব। আপনি অন্য লোক দেখেন। আমারে আইজ ধান কাটতেই হইবো। দুইদিন আগে বৃষ্টি হইয়া আমার সর্বনাশ করতে বসছে। আইজ ধান না কাটলে গোছা থেইকা সব ধান মাটিতে পইড়া যাইবো। আমারে দয়া করেন সাহেব।
কাশেম উপরের দিকে তাকিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে থাকে।
তুমি তাইলে যাইবানা ভাইজানের কাজ করতে?
না সাহেব। আপনি অন্য লোক দেখেন গিয়া।
কাশিম তার মুখের জ্বলন্ত সিগারেটের শেষ অংশটুকু হাফিজের সামনে ফেলে দিলো। তারপর পায়ের শক্ত জুতা দিয়ে কয়েক ঘা ঘষা দিয়েই মাটিতে মিশিয়ে ফেলল সেটি। হাফিজ তাকিয়ে রইল সেদিকে।
তুমি যাইবানা না? তাইলে তোমার অবস্থা কিন্তু ভালা হইবোনা কইলাম। জমিতো আর কখনো পাইবানা, ক্ষেতের ধান সুদ্ধ জমি ভাইজান নিয়া যাইবো। তখন কিন্তু কিছু করবার পারবা না।
এই কথা শুনার পর হাফিজের বুকের পানি যেন যেন শুকিয়ে গেল। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। শাওনকে কুসুমের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে কাশেমের পেছন পেছন পথ চলতে থাকে সে।
সন্ধ্যা নামার একটু আগে যখন পশ্চিমের আকাশে রঙ তুলিরা খেলা করে, রাখালের গরুর পাল রাস্তার ধূলা উড়িয়ে ফিরে আসে আপন ঠিকানায়, পাখিরাও ব্যস্ত থাকে তাদের নীড়ে ফিরে সন্ধ্যা উদযাপনের হাফিজও তখন ফিরে আসলো তার ছোট্ট দোচালা ঘরটিতে। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পর শরীরের ভারেই নুয়ে পড়া শরীরটাকে এক কদম সামনে ঠেলতে গিয়ে যেন শরীরের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করতে হয়, হাঁপিয়ে উঠে সে। তবুও রাতের বেলা ঘুমানোর আগে একটা হারিকেন হাঁতে ধান ক্ষেতটি দেখে এল। অন্যের জমিতে বেড়ে ওঠা ফসলগুলো তার কাছে যেন সন্তানের মত। আর এই সন্তানগুলোই তার অন্য সকল স্বপ্ন পূরণের একমাত্র মাধ্যম। আর মাত্র কয়েকটা দিন পরেই তার স্বপ্ন সত্যি হবে।
অভাগা এই দরিদ্র মানুষগুলো প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখতে থাকে। তবে তাদের সকল স্বপ্নগুলো সত্যি হয়না কোনদিন। তাদের স্বপনের অকাল মৃত্যুতে তারা এখন আর শোক পায়না। তবে যে স্বপ্নকে এতদিন সত্য বলে মেনেছে তা যদি নিজ চোখে ধ্বংস হয়ে যেতে দেখে তবে সে শোক সামলানোর নয়। হাফিজও পারেনি। তাই পরেরদিন সূর্যোদয়ের পরেই হাফিজ যখন পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে ধান কাটতে গেল তাকে মূর্ছিত হতে হল বাজ পড়া মানুষদের মত।
অন্যান্য কৃষকেরা তাকে ধরাধরি করে বাড়িতে নিয়ে এসেছে। সেই নুয়ে পড়া ঘরের সামনে হোগলা পাতার বিছানায় শুইয়ে রাখা হয়েছে তাকে। শয্যাশায়ী বাবার মাথার কাছে বসে কুসুম হাফিজের মাথায় সরিষার তৈল আর পানি দিচ্ছে আর সেই সাথে বিলাপ করে কাঁদছে কেবল। শাওনের মুখেও কোন ভাষা নেই। পৃথিবীর সমগ্র বিষন্নতা যেন এসে আজ ভর করেছে তার মুখে।
দীর্ঘ চেষ্টার পর হাফিজ মিয়া যখন জ্ঞান ফিরে পেল এবং তার একটু উঠে বসার অপেক্ষা তখন যমদূতের মত সামনে এসে হাজির হল কাসেম। তবে এইবার সে একা নয়। সাথে আরো তিনজন অনুচরকে নিয়ে এসেছে সে। কাশিমের চোখে মুখে উল্লাস এবং শয়তানি হাঁসির বিশুষ্ক রেখা নতুন কোন অশুভ ঘটনার ইঙ্গিত বহন করছে।সে খানিকটা হেঁসে হেঁসেই বলে চলল,
কি মিয়া! রাত দুপুরে ডাকাইতি শুরু করলা মনে হইতেছে!
হাফিজ এই কথার মানে কিছুই বুঝে উঠতে পারলোনা।শুধু হাঁ করে তাকিয়ে রইল কাসেমের দিকে।
আরে মিয়া চাইয়া আছ ক্যান? ধান কই লুকাইছ ভালোয় ভালোয় বইলা দাও। নইলে মত্তর অবস্থা আইজ ভাল হইবোনা।
এইবার যেন হাফিজ তার চৈতন্য ফিরে ফেল। কাসেমের কথার সুর বুঝতে পারলো সে। সেই সাথে আরো বিশেষ কিছু। তার শরীরের প্রতিবাদের জোয়ার বইতে শুরু করল। সে তার শরীরের সমস্ত শক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ল কাসেমের উপর। সজোরে তার গালে একটি চড় বসিয়ে দিলো। কলার চেপে ধরে তার ঘাড়ের ধমনীগুলো ফুলিয়ে বলল,
তুই। তুই আমার ধান চুরি করছিস। আমার ধান ফেরত দে। নইলে তোরে খুন করমু আমি।
উঠান ভর্তি অন্যান্য লোকগুলোর সম্মুখে এমন অপমান স্বভাবতই মেনে নেয়ার কথা না কাসেমের। সে এত জোড়ে হাফিজকে ধাক্কা মারলো যে হালকা দেহী হাফিজ তাতে ছিটকে গেল অনেক দূর। সাথে সাথেই কাসেমের ভাড়া করা লোকগুলো তাকে ধরে ফেলল।
সালা! তুই ছোটলোকের বাচ্ছার এত সাহস হয় ক্যামনে যে তুই আমার গায়ে হাত তুলিস? আইজ তোর হাত ভাংমু আমি। তুই আমারে বলিস চোর। চল তুই ভাইজানের কাছে। দশ হাজার টাকা জরিমানা দিলেও আইজ তোর জামিন নাই।
কাসেমের লোকরা যখন অসুস্থ হাফিজকে টেনে হিছড়ে নিয়ে যাচ্ছে তখন কুসুম এসে পা জড়িয়ে ধরলো কাসেমের। কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো,
আপনি আমার বাপের মত। আমার আপন বাপেরে এত বড় শাস্তি দিয়েন না। আমাগো ঘরে যত টাকা ছিল এই ন্যান।এইখানে পাঁচ হাজার দুইশ টাকা আছে। নিয়া যান। তবুও আমার বাপেরে নিয়েন না।
তখন রেগে গিজ গিজিয়ে উঠে হাফিজ।
খবরদার কইলাম কুসুম ঐ টাকা তুই কাউরে দিবিনা। ঐ টাকা তোর বিয়ার জন্য জমাইছি আমি। ঐ টাকায় আমার আর শাওনের বুকের রক্ত লাইগা আছে। তোর মরা মায়ের কসম ঐ টাকা তুই কাউরে দিবিনা।
কাসেম কুসুমের হাত থেকে টাকাটা টেনে নিয়ে গেল। মুখটা ভয়াবহ রকমের বিকৃত করে বলতে লাগলো,
শখ কত ছোটলোকের বাচ্ছার। মহাজনের জমিতে ধান চাষ করবে, সেই ধান আবার চুরিও করবে। আবার মহাজনের কাছে জরিমানা না দিয়ে মেয়ের বিয়ে দিবে, ফুর্তি করে বেড়াবে। সালা বেঈমান। তোর যে আজ কি শাস্তি হবে উপর ওয়ালা জানে।
শীর্ণ দেহী হালকা ওজনের হাফিজকে টেনে নিয়ে যেতে কাসেমের ভাড়া করা লোকদের কোন অসুবিধাই হচ্ছিলনা। কুসুমের বুক ফাটা বিলাপ আর গ্রামের অন্যান্য দরিদ্র কৃষকদের শত অনুরোধ উপেক্ষা করে হাফিজকে নিয়ে চলল ওরা মহাজনের কাছে।
শাজাহান ভুঁইয়া এই গ্রামের মেম্বার। গ্রামের হত দরিদ্র মানুষদের কাছে তিনি মহাজন নামে পরিচিত। তিনি ন্যায় কিংবা অন্যায় ভাবে এত সম্পত্তি ভোগ করছেন যে যার হিসাব ওনার নিজেরো জানা নেই। অতি ধনী আর ভদ্র সমাজের মানুষজন তাকে অত্যন্ত বিনয়ী আর ভদ্র বলে জ্ঞান করলেও তার আসল পরিচয় এটি নয়। তিনি অতি নির্দয় আর কসাই স্বভাবের মানুষ।
কাসেমের কাছ থেকে সব কিছু শুনার পর তিনি যেন ঘুম থেকে জেগে উঠা ক্ষুধার্ত অজগরের মত ফুলে ফেঁপে উঠেছেন। এখন শুধু ছোবল মারার অপেক্ষা।
হাফিজ্যা.........। তোর জন্য আমার করুণা হয়। তোকে আমি অত্যন্ত নিরীহ মনে করতাম। সেই তুই আমার ক্ষেতের ধান চুরি করলি। চুরে করে আমার লোককেই তুই আবার চোর বলিস। আবার তার গায়েও হাত তুলিস। এত সাহস কিভাবে হল তোর? ভেবে পাইনা আমি। আমার বাড়িতে মেহমান আছেন। তাই তোকে এই যাত্রায় আমি জীবিত ছেড়ে দিলাম। তবে তোর যা প্রাপ্য তা তোকে পেতেই হবে।
সেদিনের মত রীতিমত মাঝারি রকমের রাম ধোলাই দিয়ে হাফিজকে ছেড়ে দেয়া হয়। রোগা শরীর সেই আঘাত সহ্য করতে পারেনি। সেদিনই প্রচন্ড জ্বর আসে ওর গায়ে। অনেকদিন ভুগায় তাকে। হাফিজ প্রাণপণে তার মৃত্যু কামনা করে। কিন্তু গরীবের যে কঠিন প্রাণ। তাই মৃত্যুও শেষ পর্যন্ত তার সাথে ছলনা করল। শুধু চামড়া আবৃত জীবিত কঙ্কাল উপহার দিয়ে যায় তাকে। শাওনই তখন সবার দেখাশুনা করছে। মানুষের গাছ বাইতে বাইতে তার বুকে ঘা হয়ে গেছে। একদিন সেই শাওনকে পাঁজ কোলে করে বয়ে আনে তারই বয়সী আরো কয়েকটি ছেলে। গাছ থেকে পড়ে হাত ভেঙ্গে গিয়েছে ওর। নারিকেল গাছে উঠতে এখনো অনভ্যস্ত শাওন। কিন্তু গ্রামের আরেক মহাজন সাজু বেপারি তাকে নারিকেল গাছে উঠিয়েছে জোর করে। তাতেই ঘটে গেল এই অঘটনটি।
অসুস্থ ছেলের পাশে বসে চিৎকার করে কান্না করতে থাকে হাফিজ। তার মুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসে,
মরিস নাই ক্যান? ক্যান ফিইরা আইলি? এত মানুষ মরে তুই ক্যান মরলিনা? আমরা কেন এখনো মরিনা? যিনি আমাগোরে বাঁচাইয়া রাখছেন যদি এত কষ্টই দিবেন তাইলে মরণ দেয়না ক্যান? এইভাবে পশুর মত বাঁচার চেয়ে মরা অনেক ভাল।
শাওন আর কুসুম কিছুই বললনা। শুধুই বোবা কান্না করতে থাকে ওরা।
কার্তিক পেরিয়ে শীত আসলো। মাঝখানে চলে গেল কয়েকটি দিন। কিন্তু কার্তিকের যে শোক মনে গেঁথে আছে হাজার চেষ্টা করলেও তা আর মুছে ফেলা যাবেনা।
শীতেরা এখন বড্ড বেশি খামখেয়ালিপনা করছে। নির্জন রাত আর পৃথিবীকে সঙ্গ দেয়ার জন্য যে চাঁদ উঠে পৃথিবীতে প্রতিদিন তার অস্তিত্বকে বিলীন করার গভীর ষড়যন্ত্রে মেতেছে তারা। হাজারো মেঘকণার বিরুদ্ধে কঠিন যুদ্ধ করে আর কুয়াশার চাদর মাড়িয়ে অবশিষ্ট যে জোছনাগুলো মাটির পৃথিবীতে এসে পৌঁছায় তাঁদের রূপালি রং আর থাকেনা তখন। সেগুলো কালো বর্ণ ধারণ করে বুকে। মৃত জোছনা বুঝি তাঁদেরকেই বলা যায়! ঘরের দেউরিতে বসে সেই জোছনাগুলোর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কুসুম। ঐ জোছনা গুলোর মত বর্ণ ফিরে পাওয়ার আর কোন সম্ভাবনা নেই তার।কোন স্বপ্নই এখন আর দেখেনা সে। কত আশার বীজ বুনেছিল সে মনে মনে। কিন্তু অতি দানবীয় এক ঝড় এসে তার সমস্ত স্বপ্নগুলোকে দুমড়ে মুচড়ে বিদীর্ণ করে দিয়েছে। এতদিনে শ্বশুরবাড়ি থাকার কথা ছিল কুসুমের। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস। তার বাবার এমন দৈন্য দশাই তার স্বপ্নগুলোকে কবর খুড়ে দিয়েছে। আর পরিশেষে তাতে মাটি দিয়ে দাফন সম্পন্ন করেছে ছেলের বাবা। এমন অভাবের ঘরে ছেলের বিয়ে দিতে চাইবেন কেন কোন বাবা?
হাফিজ কেমন যেন হয়ে গেছে। কোন কাজেই এখন আর তার মন বসেনা। বুকের ভেতর জমে থাকা নোনা কষ্ট যখন ঢেকুর তোলে তখন বেদনায় ছটফট করতে থাকে সে। শাওন হাতের ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে ঘুমিয়ে পড়ে একসময়। শুধু ঘুমায়না কুসুম আর হাফিজ। ঘুমাতে পারেনা ওরা।
রাতজেগে রাতের নির্জনতা আর স্তব্ধ, থমকে যাওয়া প্রকৃতির গল্প শুনে তারা। তাঁদের কষ্টের কথা শোনে। টিনের চালে জমে থাকা কুয়াশাগুলো বিন্দু আকারে ফোটায় ফোটায় মাটিতে না পড়া পর্যন্ত মৃদু জোছনায় ক্ষীণ আলোর মত চিকমিক করে। সেগুলো তারা প্রত্যক্ষ করে। গাছের পাতায় জমে থাকা শিশির বিন্দুরা মাটিতে পড়ার পূর্ব মুহূর্তে কি যে বুক-ফাটা করুন আর্তনাদ করে,তাও শুনে তারা। শুধু তাঁদের কথাগুলো কেউ শোনেনা। শুধু তাঁদের কথা শোনার কেউ নেই। যুগ যুগ ধরে তাঁদের বুকে যে শোষণ, বঞ্ছনা আর ত্যাগের ইতিহাস সঞ্চিত হয়েছে তা এখন শোকে পরিণত হয়েছে। সেই শোকার্ত মানুষগুলোর শোকের গল্প কারা শুনবে? কারা শুনবে মৃত জোছনাকে সাক্ষী করে পৃথিবীর বঞ্ছিত মানুষগুলোর করুন অমাবশ্যার গল্প?
কিছু কথাঃ
সম্মানিত বিচারক মন্ডলী ও পাঠকগণের কাছে আপাতদৃষ্টিতে গল্পটি বিষয় বহির্ভূত মনে হতে পারে। কেননা গল্পকবিতায় এই সঙ্খায় লেখা জমা দেয়ার বিষয় “গর্ব” হলেও আমার গল্পে তা মোটেও আসেনি। আমি শুধু আমার গল্পে গ্রাম বাংলার একজন প্রান্তিক কৃষকের করুণ দিন যাপন, তাঁদের দুঃখ- দুর্দশা, প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় তাঁদের অবস্থান এবং বর্গা জমি চাষ করতে গিয়ে নানা হেনস্তার স্বীকার এমনকি তাঁদের বিরুদ্ধে প্রকৃতির প্রতিকূলতা ও আবহাওয়ার বৈরিভাব তুলে আনার চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি তিনটে মানুষের স্বপ্নভঙ্গের বেদনা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যে কৃষকেরা নিজেদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশের অর্থনীতির চাকা প্রতিনিয়ত সচল রেখে আসছেন, জাতির মুখে খাবার তুলে দিয়ে নিজেরা উপোস থাকেন আমার কাছে তারাই আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান, তারাই আমাদের গর্ব। যেদিন আমাদের দেশের প্রতিটি কৃষক তার উপযুক্ত সম্মান পাবে সেদিনই আমার এই গল্পটিকে আমি সার্থক মনে করবো।
৩১ জানুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৯ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪